ডেস্ক রিপোর্ট –

সিলেটের কানাইঘাট সীমান্তবর্তী লোভাছড়া পাথর কোয়ারী দীর্ঘদিন ধরে দেশের অন্যতম পাথর উত্তোলনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। কিন্তু লাগামহীন ও অবৈধ উত্তোলনে ধ্বংস হয়েছে পাহাড়, নদী ও বনভূমি। পরিবেশবাদীদের আন্দোলন ও প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের মুখে অবশেষে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এ কোয়ারী। এতে পরিবেশপ্রেমীদের স্বস্তি এলেও হাজারো শ্রমিক ও তাদের পরিবার পড়েছেন বিপাকে।

দীর্ঘ ইতিহাস, ভয়াবহ ক্ষতি-

লোভাছড়া কোয়ারী সরকারি উদ্যোগে চালু হলেও গত দুই দশকে প্রভাবশালী চক্রের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।

অবৈধ পাথর উত্তোলনে—
নদীর তলদেশ অস্বাভাবিকভাবে গভীর হয়ে গেছে,

জলজ প্রাণী বিলীন হওয়ার পথে,

পাহাড়ি বনভূমি নিশ্চিহ্ন হয়েছে,

স্থানীয় গ্রামে ভাঙন ও ভূমিধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

পরিবেশ কর্মী আনোয়ার হোসেন বলেন, “লোভাছড়া একসময় ছিল জীববৈচিত্র্যের অভয়ারণ্য। এখন শুধু ধ্বংসস্তূপ পড়ে আছে। এই কোয়ারী বন্ধ করা ছিল সময়ের দাবি।”

কানাইঘাট সচেতন নাগরিক ফোরাম ও আর এন ফাউন্ডেশনের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বাবলু বলেন, পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি লাখো শ্রমিক এবং তাদের পরিবারের কথা বিবেচনা করে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন করে দেওয়া প্রয়োজন।

শ্রমজীবী মানুষের জীবনে আঘাত-

কোয়ারীতে পাথর ভাঙা, বহন ও পরিবহনের কাজে প্রতিদিন কয়েক হাজার শ্রমিক যুক্ত ছিলেন। হঠাৎ কোয়ারী বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

স্থানীয় শ্রমিক রহিম আলী ক্ষোভ ঝেড়ে বলেন, “আমরা দিনে ৪০০–৫০০ টাকা আয় করতাম। এখন কোনো কাজ নেই। সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে।”

প্রশাসনের কড়া অবস্থান-

জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে লোভাছড়ায় অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করেছে। কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানান, “অবৈধভাবে পাথর তোলা আর সম্ভব হবে না। পরিবেশ রক্ষা আমাদের অগ্রাধিকার। শ্রমিকদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করা হবে।”

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ-

একদিকে পরিবেশ সংরক্ষণ, অন্যদিকে হাজারো শ্রমিকের জীবিকা—এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করাই এখন সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিকল্প কর্মসংস্থান না দিলে বেকার শ্রমিকরা আবারও অবৈধ কোয়ারীতে জড়াতে পারেন।

এক কথায় লোভাছড়া কোয়ারী বন্ধ হওয়ায় প্রকৃতি বাঁচার সুযোগ পেলেও মানুষের জীবিকার প্রশ্নে তৈরি হয়েছে নতুন সংকট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *